বিংশ শতকের শুরুটাই ছিল পৃথিবী কাঁপানো সব উদ্ভাবনের স্বর্ণযুগ। বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন সব আবিষ্কার হয়েছে যা প্রচুর মানুষের জীবন বাঁচানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে সময়কার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল আয়রন লাং, ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত বহু মানুষের স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার উপায় করে দেয় তা।
অন্যান্য রোগের তুলনায় পোলিও রোগের চিকিৎসায় আয়রন লাং বেশী ব্যবহার করা হত। ১৯৫৫ সালে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কারণে এখন এই রোগটি বিরল হয়ে এসেছে। কিন্তু ১৯৪০ এবং ৫০ এর দিকে তা খুবই ভয়ংকর আকার ধারণ করেছিল। বিশেষ করে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর ছিল এই রোগ। যাদের চিকিৎসায় আয়রন লাং ব্যবহার হত তাদের বেশীরভাগই ছিল শিশু। প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর সাধারণত কেউ এটা ব্যবহার চালিয়ে যেত না।
আয়রন লাং ১
পুরো ওয়ার্ড ভরা আয়রন লাং এর ভেতরে পোলিওর রোগী।
কিন্তু টেক্সাসের ৭০ বছর বয়সী পল আলেক্সান্ডার এর ব্যতিক্রম। তিনি ১৯৫২ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত আয়রন লাং ব্যবহার করে আসছেন। মাত্র ৫ বছর বয়সে পোলিও হয় তার, ফলে তার ফুসফুস স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু ফুসফুস নয়, গলার নিচে তার সারা শরীরই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে পোলিওর কারণে। আয়রন লাং এর অন্যান্য বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হবার কারণে তার কোনোটাই আয়রন লাং এর মত এত কার্যকরী নয়। কিন্তু পল এতে থেমে যাননি। ট্রায়াল লয়ার হিসেবে তিনি কাজ করেছেন এবং বর্তমানে একটি আত্মজীবনী লিখছেন।
কীভাবে কাজ করে এই আয়রন লাং? রোগীরা এর ভেতরে শুয়ে থাকে, এরপর তাদের গলার চারপাশে তা শক্ত করে আটকে দেওয়া হয়। এতে একটি কৃত্রিম শূন্যস্থান বা ভ্যাকুম তৈরি হয়। রোগীদের ফুসফুস অক্সিজেনে ভরিয়ে তুলতে তা সাহায্য করে। কিন্তু এই যন্ত্র দীর্ঘ সময় ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হয়নি। এ কারণে এত লম্বা সময় তা ব্যবহার করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন পল।
আয়রন লাং ২
প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর সাধারণত কেউ এটা ব্যবহার চালিয়ে যেত না।
পুরো পৃথিবীতে মাত্র ১০ জন মানুষ আছে যারা আয়রন লাং ব্যবহার করছেন এখনো। ১৯৬০ দশকের পর আর এই যন্ত্র তৈরি করা হয়নি। ফলে মেরামতের দরকার হলে তাদেরকে অনেকটা খরচ করে, ঝামেলা সহ্য করে স্পেয়ার পার্টস সংগ্রহ করতে হয়। ২০১৫ সালে যখন পলের আয়রন লাং সমস্যা করতে থাকে, তখন তিনি অনলাইনে সাহায্যের আকুতি জানান। ব্র্যাডি রিচার্ডস নামের এক মেকানিক তাকে সাহায্য করার কথা জানান।
আয়রন লাং এতটাই পুরনো যে, ওয়ার্কশপে নিয়ে আসার পর তার তরুণ কর্মচারীরা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না এটা কী। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের ডরমিটরিতে তিনি এই আয়রন লাং নিয়ে বাস করেন তা মেরামত না হওয়া পর্যন্ত। এ সময়ে প্রচুর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হয় তার। “মেশিনের ভেতর থেকে মাথা বের করে থাকা লোকটা কে, কী করছে এখানে”, এটাই ছিল সবার প্রশ্ন।
লিলার্ড
বামের ছবিতে দেখা যাচ্ছে আয়রন লাং এর ভেতরটা। আর ডানে মার্থা অ্যান লিলার্ডের তরুণ বয়সী ছবি। ছবি: viral thread
আরো একজন মানুষের কথা বলা যায় এক্ষেত্রে, তিনি হলেন মার্থা অ্যান লিলার্ড, জিনি আয়রন লাং এর ভেতরে কাটিয়েছেন ৬০ বছরেরও বেশী। পোলিওর ক্ষতির কারণে আয়রন লাং ছাড়া অন্য কোন ভেন্টিলেশন সিস্টেম তিনি ব্যবহার করতে পারেন না। তবে তিনি এর বাইরে যতটা সম্ভব সময় কাটানোর চেষ্টা করেন।