সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে কিস্তির টাকা দিতে না পেরে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে এক হতভাগা গৃহবধু আত্বহত্যা করেছে। নিহত জরিনা খাতুন (২৮) উপজেলার পশ্চিম খাসকাউলিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষি শ্রমিক আব্দুর রোউফের স্ত্রী। তাদের পরিবারে শিশু ৫ সন্তান রয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়রা জানান, যমুনার বার-বার ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত জরিনা খাতুন অভাবের কারনে গ্রামীন ব্যাংকের পাশ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার শাহজানী ভাড়রা ইউনিয়ন শাখা অফিস থেকে ০৭.০৫.১৭ইং দু দফায় ২০ এবং ১০ হাজার টাকা ঋন গ্রহন করে।
এরপর থেকে নিয়মিত সাড়ে ৭শ টাকা সপ্তাহে কিস্তি দিয়ে আসছিল। হঠাৎ শিশু সন্তানদের নিয়ে অভাবের সংসার চালাতে নানা অনটনে পড়ে তার পরিবার।
দুবেলা দু মুঠো খাবার জুটতো না। রোববার সকালে ছিল সপ্তাহিক কিস্তির টাকা দেবার সময়। অভাবের কথা শুনে এনজিও গ্রামীন ব্যাংকের মাঠ কর্মীরা আগে থেকেই টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল তার।
কোন ভাবেই কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে পারছিলেন না তিনি। তাই আগের দিন শনিবার সকালে কোন উপায় না বুঝে নিজের ঘর আটকিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আত্বহত্যার চেষ্টা চালায়।
এতে শরীরের অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়। তখন স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে তাকে দ্রুত ঢাকায় নেবার পরামর্শ দেয় চিকিৎসকরা।
পরে ঢাকায় নিয়ে যাবার পথে রাত একটার দিকে সে মারা যায়। নিহত জরিনার স্বামী আব্দুর রোউফ অভিযোগ করে জানান, আমাদের অভাব দেখে কিস্তির টাকার জন্য গ্রামীন ব্যংকের কর্মীরা নানা ভাবে আগে থেকেই চাপ দিত। তবে অভাবের কারনে টাকা গোছাতে না পেরে আমার স্ত্রী শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্বহত্যা করেছে।
এদিকে গ্রামীন ব্যাংক ভাড়রা শাখা ম্যানেজার রঞ্জু আহমেদ জানান, আমরা টাকার জন্য আসলে অতোটা চাপ দেইনি। জরিনার মৃত্যুর কথা শুনে আমরা তার বাড়ি গিয়েছি পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিয়েছি।
পাওনা টাকা মওকুপ সহ বীমার টাকা পরিবারের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে। তবে এতো কিছুর কিছুই জানেনা চৌহালী থানা পুলিশ। থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা অবহিত নই, তবে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।