গত ১৫ ডিসেম্বর রেকর্ডসংখ্যক ১৭৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে জায়েদ খান অভিনীত অন্তরজ্বালা ছবিটি। মালেক আফসারী পরিচালিত এই ছবির জন্য জায়েদকে এখন অন্যভাবে মূল্যায়ন করছেন দর্শক।
অন্তরজ্বালায় অন্য এক জায়েদ খানকে পেল দর্শক। এর নেপথ্যটা বলবেন কি?
জায়েদ খান : এর নেপথ্য হলো পরিশ্রম। আমার ভালো লাগছে দর্শক সেই পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করেছেন। সিনেমা আমার ভালোবাসা, আমার স্বপ্ন। ‘অন্তরজ্বালা’ সিনেমার মাধ্যমে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। এই স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল সেই ছেলেবেলায়। অন্তরজ্বালা দিয়ে দর্শক আমাকে নতুনভাবে জন্ম দিয়েছে, যে আবেগ যে ভালোবাসায় আমাকে অশ্রুসিক্ত করলেন, হয়তো অনন্তকাল বলেও আমি দর্শকদের সে আবেগ প্রকাশ করতে পারব না। তবে এই সিনেমার মাধ্যমে আমার দায়িত্ববোধ অনেক বেড়ে গেছে।
এই ছবির শুটিং চলাকালে নাকি আপনার রঙ তামাটে হয়ে গিয়েছিল?
জায়েদ খান : আমি প্রথমেই বলেছি, এই সিনেমার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। আগে যেসব সিনেমায় কাজ করেছি, নায়ক হওয়ার চেষ্টা ছিল; এখানে আমি অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করেছি। আর হ্যাঁ, চরিত্রের প্রয়োজনে আমাকে রোদে পুড়ে তামাটে রঙ ধারণ করতে হয়েছে এবং টানা দু’দিন না খেয়ে থেকেছি। আমি খুবই আনন্দিত এই ছবিতে কাজ করে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেকে আমি ভাঙার চেষ্টা করেছি। এ সব কিছু করার কারণ হচ্ছে- দর্শককে একটি ভালো সিনেমা উপহার দেয়া। অন্তরজ্বালা সিনেমার গল্পটিও অন্য রকম। পরলোকগত নায়ক মান্নার একজন অন্ধভক্তের কাহিনী নিয়ে এই সিনেমার গল্পটি নির্মিত হয়েছে। সেই অন্ধভক্তের চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। আমার সহশিল্পী পরীমনি। খুবই কো-অপারেটিভ অভিনেত্রী। ভালো অভিনয় করেছেন। মানুষ হলে গেলে ভালো একটা সিনেমা দেখতে পারবেন বলে মনে করি। এই ছবিতে আরো যারা অভিনয় করছেন, তারাও ভালো করেছেন। যেমন- নবাগত জয় চৌধুরী, মৌমিতা মৌ, মিজু আহমেদ, সাঙ্কু পাঞ্জা, রেহেনা জলী, বড়দা মিঠু ও চিকন আলী সবাই অনেক ভালো অভিনয় করেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি ছবিটির প্রযোজকও আপনি। একজন অভিনেত্রী অভিযোগ করেছেন তাকে ছবিতে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে উপস্থাপন করা হয়নি। কেন?
জায়েদ খান : কাকে কিভাবে উপস্থাপন করা হবে সেটা পরিচালকের ব্যাপার। তার চেয়ে বড় কথাÑ স্ক্রিপ্ট যেভাবে লেখা ছিল শুটিং সেভাবেই হয়েছে। কোনো দৃশ্যে যদি আমার আপত্তি থাকে সেটাতে আমি অভিনয় না করলেই তো হলো। যিনি অভিযোগ করেছেন, শুটিংয়ের সময় তিনি এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি করেননি। এখন কেন তিনি অভিযোগ করছেন সেটা আপনার মতো আমার কাছেও প্রশ্ন। আমার মনে হয়েছে, অন্তরজ্বালায় সব শিল্পীকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর।
অন্তরজ্বালা ছবির শুটিংয়ে স্মরণীয় ঘটনা আছে?
এ ছবির শুটিং চলার প্রতিটি দিনই আমার জন্য স্মরণীয়। তবে এ মুহূর্তে দু’টি ঘটনা খুব মনে পড়ছে। একটি হলো ছবির চরিত্রের আদলে নিজেকে সাজাতে পরিচালকের নির্দেশে ৯০ দিন ভাত খাইনি। দ্বিতীয় স্মরণীয় ঘটনা হলো, এই সিনেমায় একটি কাদামাখা দৃশ্যের শুট করতে আমাকে সারা দিন গায়ে কাদা মেখে থাকতে হয়েছিল।
অন্তরজ্বালা দিয়ে বন্ধ থাকা কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ খোলা হয়েছে। এর কারণ কী?
জায়েদ খান : অন্তরজ্বালা চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে সারা বছর বন্ধ থাকা এমন ১৭টি সিনেমা হল নতুন করে চালু হয়েছে। ছবিটির ট্রেলার দেখে মালিকেরা বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ খুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমার বিশ্বাস দেশীয় চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো সচল হবে। যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণার ছবি আর করতে দেয়া হবে না।
চলচ্চিত্র নিয়ে নতুন করে কি স্বপ্ন দেখছেন?
জায়েদ খান : প্রতিটি মানুষের জীবনে স্বপ্ন থাকে। আর স্বপ্ন পূরণের জন্যই মানুষ বেঁচে থাকে। আমি চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি। যা কিছু করেছি তা চলচ্চিত্র টিকিয়ে রাখার জন্যই করছি। চলচ্চিত্র ছাড়া অন্য কোনো ভালোবাসার জায়গা আমার নেই।
আপনার এই সফলতাকে অন্য শিল্পী ও কলাকুশলীরা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
জায়েদ খান : আমার শুরু থেকে চলচ্চিত্রের প্রতি মানুষকে আমি অনেক আপন করে ভালোবাসি। সবসময় সবার বিপদে আপদে থাকার চেষ্টা করি। গত শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও আমার সহকর্মীদের ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। এর চেয়ে আর কী ভালোবাসা থাকতে পারে। এ ছাড়া অন্তরজ্বালার শুটিং করার জন্য আমার দেশের বাড়ি পিরোজপুরে ১০৩ জনের একটি টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় ৫০ দিনের মতো শুটিং করেছিলাম। ওই সময় বুঝেছি আমার গ্রামের মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে।
যেই পিরোপজপুর নিয়ে এত স্মৃতি। সেখানে ছবি দেখতে যাবেন না?
জায়েদ খান : আজই (মঙ্গলবার) হেলিকাপ্টারে করে বরিশাল ও পিরোজপুরে যাবো সিনেমা দেখতে। ওখানকার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হতে রওনা দেবো কিছুক্ষণ পরই।