সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে কিছু তাত্পর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। আগামী বছরের শুরু থেকেই জনসাধারণকে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অনুমতি দেওয়া হবে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের কর্তৃ্পক্ষ জানিয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যেই প্রথম সিনেমা মুক্তি পাবে।
১৯৮০’র দশকের শুরুর দিকে ধর্মীয়ভাবে কঠোর রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে সিনেমা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথম তা আবার চালু হচ্ছে অর্থাৎ সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
২০১৮ সালের জুন থেকে সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালাতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর নারীদের স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি দেশটির একটি স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো নারীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে সৌদি সরকার বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা অনুমোদন করে। ‘ভিশন ২০৩০’ নামের এই মহাপরিকল্পনার লক্ষ্য দেশটির তেলনির্ভর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনা। তেলের রাজস্বের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো। তেলের বাইরে অন্য খাতে ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরব প্রথমবারের মতো দেশটির নারীদের প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেয়। সৌদি আরবের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মুঠোফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ভিশন ২০৩০-এর অংশ হিসেবে সাড়ে ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি শহরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, নাম নিওম। শহরটি সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে কিছু প্রমোশনাল ভিডিও প্রকাশ করে সৌদি আরব। ভিডিওতে হিজাবহীন নারীদের দেখা যাচ্ছে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজে অংশ নিতে।
রেড সি’তে পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল আবাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে, যার অর্থ নারীরা সেখানে বিকিনি পরতে পারবেন, উন্মুক্ত থাকবে বার৷ ২০১৭ সালেই প্রথমবারের মতো রাজধানী রিয়াদের একটি বড় রেস্টুরেন্টে প্রধান শেফ হিসেবে নিয়োগ পান এক নারী।
সৌদিতে সিনেমায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
কয়েক দশক ধরে বহাল থাকা সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি আরব। অতি-রক্ষণশীল অবস্থা ভেঙে সৌদি যুবরাজ সামাজিক সংস্কারের যে ধারাবাহিক কার্যক্রম তারই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরকার শিগগিরই সিনেমার লাইসেন্স দিবে উল্লেখ করে সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের শুরু থেকেই বাণিজ্যিক সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেয়া হবে। এর ফলে ৩৫ বছর পর প্রথমবারের মতো দেশটিতে সিনেমা প্রদর্শন করা হবে।’
সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে সৌদি আরবে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আনা হবে, রক্ষণশীলদের বিরোধিতা সত্ত্বেও ‘ভিশন ২০৩০’ নামে যে সংস্কারমূলক কাজের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে তারই অংশ হিসেবে বিনোদনের এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী আওলাদ আলাউভাদ একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা।’ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য হুমকি উল্লেখ করে ১৯৮০ সাল থেকে সৌদি আরবে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ রয়েছে।
গত জানুয়ারিতে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সতর্ক করে বলেছিলেন, সিনেমা বিশৃঙ্খলা বাড়াবে এবং নৈতিক স্খলন ঘটাবে। তবে কর্তৃপক্ষ বলেছে, এসব হুমকি উপেক্ষা করেই সিনেমা প্রর্দশন করা হবে।
পুড়ছে সৌদি রাজতন্ত্র!
জেরুসালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন দেয়ার প্রতিবাদে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অধিবাসীরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ছবিতে আগুন দিয়েছে।
রোববার গাজাবাসী এক বিক্ষোভে অংশ নিয়ে এভাবেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে গাজা শহরে এ বিক্ষোভের ডাক দেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী পপুলার ফ্রন্ট।
মুসলমানদের প্রথম কেবলাসমৃদ্ধ শহর জেরুসালেমের প্রতি অবমাননার প্রতিবাদ জানাতে হাজার হাজার গাজাবাসী বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিকৃতিতে আগুন দেয়। বিক্ষোভকারী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের ছবিতেও আগুন জ্বালায়।
সৌদি আরবের সাথে বন্ধুত্ব করতে যে শর্ত দিয়েছে ইরান
ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন এবং ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসন বন্ধ করলে সৌদি আরবের সঙ্গে তার দেশ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি। সম্প্রতি ইরানের পার্লামেন্টে দেয়া এক বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রতি আনুগত্য বন্ধ করার পাশাপাশি নিজের এবং আঞ্চলিক জাতিগুলোর ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতা বাড়ালে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
রুহানি বলেন, সৌদি আরবের উচিত দারিদ্রপীড়িত ইয়েমেনি জনগণের ওপর নির্বিচারে বোমা হামলা বন্ধ করা এবং ইসরাইলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য যে দৌড়ঝাপ করছে সেখান থেকে সরে আসা। আমরা সৌদি আরবের কাছ থেকে দু’টি জিনিস প্রত্যাশা করছি। আর তা হলো ইসরাইলের সঙ্গে বিভ্রান্তমূলক বন্ধুত্ব ছিন্ন করা এবং ইয়েমেনের ওপর অমানবিক বোমা বর্ষণ বন্ধ করা।
অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত বদলাতে বললো সৌদি আরব
মার্কিন দূতাবাস ইসরাইলের তেল আবিব থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেছেন, ‘আমার সরকার মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যেন তারা নিজ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এবং আন্তর্জাতিক সম্মতি অনুসারে ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের বৈধ অধিকার ফিরে পাবার সুযোগ দেয়। কেননা আমরা মনে করি, এই সিদ্ধান্ত জেরুসালেম বা অন্যান্য দখলকৃত এলাকাগুলোতে ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় অধিকার পরিবর্তন বা খর্ব করতে পারবে না। কিন্তু এটা শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা এবং এই প্রক্রিয়ার দেশটির এতদিনের অবস্থানের বদলই প্রকাশ করে।’
মিশরের কায়রোতে আরব লিগের বৈঠকে আল-জুবায়ের বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক ও আরব পিস ইনিশিয়েটিভের নীতিমালার ভিত্তিতে স্থায়ী, ন্যায্য এবং বোধগম্য সমাধানের কাঠামোর মধ্য দিয়ে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই। যেন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র ও পূর্ব জেরুসালেমকে সেই রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পাবার আইনি অধিকার নিশ্চিত হয়। একই সঙ্গে যেন ওই অঞ্চল এবং পুরো বিশ্বে তাদের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়।’
সূত্র : আরব নিউজ
সৌদি আরবে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হচ্ছে সিনেমা
সৌদি কর্তৃপক্ষ তিন দশক আগে বাণিজ্যিক সিনেমার ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা শিগগিরই সিনেমার লাইসেন্স দেয়া শুরু করবে।
আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের মার্চ থেকেই প্রথম সিনেমা শুরু হবে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এর ভিশন ২০৩০ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির আওতায় এমন ঘোষণা এলো দেশটির পক্ষ থেকে।
যদিও সম্প্রতি গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুল আজিজ আল শেখ সিনেমার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
তার মতে, সিনেমার অনুমোদন দেয়া হলে তা নৈতিকতাকে দূষিত করবে।