শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪১৫৮৩ কোটি টাকা

ডেস্ক নিউজ : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। রোববার জাতীয় সংসদে মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে (৩০ জুন ২০২০) রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ১৫ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৯০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৫৮ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো বিকল্প-বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে সফল না হলে মামলা করা হচ্ছে। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী আরও জানা গেছে, গত ৫ বছরে (২০১৫-২০১৯) সোনালী ব্যাংক ৫ হাজার ৩০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৬৩ লাখ, অগ্রণী ব্যাংক ২ হাজার ৯৫৫ কোটি ৩৪ লাখ, রূপালী ব্যাংক ১ হাজার ৮৫ কোটি ৩০ লাখ, বেসিক ব্যাংক ৮৮০ কোটি ৮৬ লাখ ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১ হাজার ৭১ কোটি ৮ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। ঋণ মওকুফ : নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ১ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ মওকুফ করেছে। হাবিবর রহমানের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১৬ হাজার ১টি শুল্ক মামলার বিপরীতে অনাদায়ি রাজস্বের পরিমাণ ৭ হাজার ৫৮৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

হারুনুর রশীদের প্রশ্নের উত্তরে আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৫৫৫ দশমিক ৭৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা প্রদানে ভারত ও বাংলাদেশ ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত ৯০৪ দশমিক ৭৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ ছাড় হয়েছে। তবে এ অর্থনৈতিক গতি মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের মেয়াদেই গতি লাভ করেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে তিনটি এলওসি চুক্তির আওতায় ৭ দশমিক ৫৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব ঋণের আওতায় অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যক্তি খাতের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে।

মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, আমদানি-রফতানিতে অবমূল্যায়ন ও অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে মুদ্রা পাচারের কথা আমরা পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখতাম। এ সংক্রান্ত অভিযোগ আজকাল আর শুনি না। তবে, সুনির্দিষ্ট মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়মিতভাবে তা খতিয়ে দেখছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। করোনা পরবর্তীতে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী : এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের পদক্ষেপে করোনা পরবর্তীতে পুঁজিবাজার খোলার পর বাজারে শেয়ার মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সিকিউরিটিজের মুল্য হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়া সারা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক দর পতনের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের লেনদেনও এর ব্যতিক্রম নয়। ওই সময়কালে পুঁজিবাজারের লেনদেনও সাময়িকভাবে বন্ধ ছিলো। করোনা পরবর্তীতে পুঁজিবাজার খোলার পর থেকে সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের ফলে বাজারে বর্তমান শেয়ার মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ সময় মন্ত্রী পুঁজিবাজারর স্থিতিশীলতা তথা উন্নয়নের স্বার্থে এবং অস্বাভাবিক দরপতন রোধে সম্প্রতি নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস সম্পর্কিত নির্দেশনা জারি, পুঁজিবাজার উন্নয়নে জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি।

এই বিভাগের আরো খবর