শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের একমাত্র হাজারদুয়ারী জমিদার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়

জীবন বাগমারা রাজশাহী প্রতিনিধিঃ হাজারদুয়ারি জমিদারবাড়ি বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত।
১৮০০ শতাব্দীর এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। উপমহাদেশে আর একটি হাজারদুয়ারী মসজিদ ভারতে অবস্থিত। ভারতে না গিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন রাজশাহী জেলার বীরকুৎসা গ্রামের জমিদার বাড়ি। উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ থেকে ১৮ কি: দুরত্বে ও রাজশাহী থেকে প্রায় ৬০ কি: মি: দুরত্বে, বাগমারা সীমানার শেষ প্রান্তে যোগীপাড়া ইউনিয়নের বীরকুৎসা গ্রামে এটি অবস্থিত। নাটোর-সান্তাহার রেলপথের পাশে ৫০ বিঘা জমির উপর এই জমিদার বাড়ি অবস্থিত। আপনি নাটোর-নওগাঁ মহাসড়ক মাধ্যম কিংবা নাটোর-সান্তাহার ট্রেন মাধ্যম বীরকুৎসা ষ্টেশন পৌছতে পারেন। এখান হতে পায়ে হেটে বা ভ্যান মাধ্যম জমিদার বাড়িতে পৌছা যাবে। বাড়িটির এক সময়ে হাজারটি দুয়ার বা দরজা ছিল বলে এর নামকরণ করা হয় হাজার দুয়ারী। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় নওগাঁ জেলার আমরুল ডিহির বিশার রাজা গোপাল ধাম তার মেয়ে প্রভাতী বালা’কে ভারতের কাশী থেকে আসা বীরেশ্বর বন্দ্যেপাধ্যায়ের সাথে বিয়ে দেন এবং তার নিয়ন্ত্রিত এই বীরকুৎসা পরগণাটি মেয়ে প্রভাতী বালা ও জামাই বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে লিখে দেন। প্রভাতী বালা ছিলেন খুবই শৌখিন। তার পছন্দমতো স্বামী বিরুবাবু এখানে গড়ে তোলেন এই হাজার দুয়ারি সুরম্য অট্টলিকা। এর দরজাগুলো সেগুন কাঠের তৈরী এবং সুন্দর কারুকাজ করা ছিলো। দরজাগুলো ছিল তিন স্তরে সাজানো। প্রথমে কাঠ, তারপর লোহার গ্রিল, এরপরে তা দামি কাচে মোড়ানো ছিল। বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই ভাই দুর্গা বাবু ও রমা বাবু এই প্রসাদেই থাকতেন। প্রসাদের পশ্চিম দিকে খিড়কি দরজা পার হয়ে সান বাঁধানো একটি বিরাট পুকুর রয়েছে। এই পুকুরে শুধু জমিদার পরিবারই গোসল করত। প্রসাদের ভেতরের এক পাশে ছিল জলসা ঘর যেখানে কলকাতা থেকে ভোলানাথ অপেরা এসে গান বাজনা করতো। পূর্ব দিকের দেউড়ির দুই পাশে ছয় জন করে বারো জন বরকন্দাজ থাকত। দেউড়ির পাশে ছিল মালখানা। এর কিছুদুরে ছিল মহাফেজখানা। প্রসাদের পুর্বের দেউড়ি পার হয়ে সামনে আরেকটি বড় পুকুর আছে, যেখানে গোসল করত আমলা, পেয়াদা ও বরকন্দাজরা। এই পুকুরটি এখন বেদখল হয়ে গেছে। বকুলতলার পাশে খাজনা আদায়ের ঘর ছিল যা এখন বীরকুৎসা তহসিল অফিস নামে পরিচিত। এর পাশের পূজা মন্ডপটিতে বসানো হয়েছে পোষ্ট অফিস। প্রসাদের সামনে ছিল ফুলের বাগান যেখানে জমিদার পরিবার বিকেলটা কাটাত।

এছাড়া এই রাজপ্রসাদের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকের ধারনা : আঠারো শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জমিদার অবিনাশ এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।
জমিদার অীবনাশের কোন পুত্র সন্তান না থাকায়, ভারতের হুগলী এলাকার তার ভাগ্নে পঞ্চাননের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে তার জমিদারীর দায়িত্বভার প্রদান করেন। এই পঞ্চাননের ৩ পুত্র রামাবাবু, দূর্গাবাবু ওবীরবাবু। পঞ্চানন বাবুর প্রিয় পুত্র ছিল বীরবাবু তিনি পরবর্তী কালে জমিদারের দায়িত্ব পালন করেন ও অন্য দুই ভাই এখানেই থাকত। বীরবাবু দায়িত্ব পালন কালে এই হাজারদুয়ারী প্রসাদটি দ্বীতল ও এক হাজার দুয়ার বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করেন। এই মতের ধারক বাহকরা মনে করেন, বীরবাবুর নাম অনুসারে এই এলাকার নামকরণ হয় বীরকুৎসা। অন্য মতে, বীরবাবুর চেহারা কালো কুৎসিত ও তিনি খুব শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন। ফলে তার নাম অনুসারে বীরকুৎসা নামকরণ হয়েছে। আর এই নামেই এখানে বিল, স্টেশন, স্কুলসহ অনেক প্রতিষ্ঠনই এই বীরবাবুর নামে চলে আসছে।

বর্তমানে এখানে আসলে দেখতে পাবেন সত্যিকারের পুরাতন ভবন যা আমাদের রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার জমিদারত্বের স্বাক্ষী।
এছাড়া চোখে পড়বে পুরোনো ইটের গাঁথুনি, সুচারু কারুকাজ, খসে পড়া পলেস্তারা ও শেওলা গজানো দেয়াল চোখে পড়বে। ভাঙ্গা দরজা-জানালা, নেই দরজার সেই দামি কাঁচগুলো আর নেই মেঝের সেই শ্বেত পাথরের টাইলস। বাগানটি দখল করে বিভিন্ন দোকান করা হয়েছে। যদিও স্থাপনাটি প্রত্নতাত্ত্বিক এর আওতাধিন কিন্তু এর অনেক জায়গায় দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি কিংবা এত সুন্দর ভবনের কোন সংস্কার হয়নি।
ভারতের হাজার দুয়ারী মহল আজ গোটা বিশ্বের পর্য টকদের আকৃষ্ট করছে ও দৈনিক হাজার হাজার পর্যটকদের এখানে আনাগোনা রয়েছে কিন্তু আমাদের দেশের এই হাজার দুয়ারী মহল সংস্কার ও প্রচারের অভাবে আজ অবহেলিত।

তাই আসুন আমরা রাজশাহীবাসী আমাদের এই প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন কেন্দ্রটি সকলের মাঝে শেয়ার করি।

এই বিভাগের আরো খবর