শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাসিমকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছে না পরিবার

ডেস্ক নিউজ : অস্ত্রোপচারের পর কয়েক দিন স্থিতিশীল থাকার পর বৃহস্পতিবার ‍সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থার বেশ অবনতি হয়।রক্তচাপ ওঠানামা করতে থাকে।এরপর রাতের দিকে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে।তবে শুক্রবারও অবস্থার কোনো উন্নতি নেই নাসিমের। এমতাবস্থায় তাকে নিয়ে স্থানান্তরের ঝুঁকি নিতে চাইছে না পরিবার।বিদেশ নিয়ে গিয়ে উন্নত ট্রিটমেন্ট দেয়ার মত অবস্থায় নেই নাসিম।তাই মেডিকেল বোর্ডও স্থানান্তরের বিষয়ে নিরুতসাহিত করছে। এর আগে অবস্থার অবনতি না হওয়ায় সিঙ্গাপুরে নিতে প্রস্তুতি শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় এখনই স্থানান্তরের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তারা। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ মেনেই এগোতে চাইছে পরিবার। তার পরিবারের একটি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে নাসিমের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় গণমাধ্যমকে বলেন,অস্ত্রোপচারের পর কয়েক দিন বাবার স্বাস্থ্যের উন্নতি না হলেও অবনতি হয়নি।কিন্তু হুট করে অবস্থার অবনতি হওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে। জানা গেছে, স্থিতিশীল থাকা অবস্থায় নাসিমকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে এখন বিদেশে নেওয়ার অবস্থা নেই। বৃহস্পতিবার দিনভর আলোচনায় ছিল নাসিমকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে পরিবার।মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বিএসএমএমইউর ভিসি ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াও বুধবার বলেছিলেন,চাইলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে বিদেশ নেয়া যেতে পারে।কিন্তু গত দুদিনে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় পরিবার বিদেশ নিয়ে যাওয়ার সাহস করছে না। ৩-৪ ঘণ্টার সফরে পথে যদি কিছু একটা ঘটে যায় এই চিন্তায় পরিবার এখনও বিদেশ নিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার নাসিমকে সিঙ্গাপুরে নিতে চাইলেও তার বর্তমান শারীরিক অবস্থায় সেটা সম্ভব নয় বলে মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্রের বর্তমান শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিউল হক। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুনেছি তাকে বিদেশে নেয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু, এই অবস্থায় তাকে বিদেশে নেয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। মোহাম্মদ নাসিমের বর্তমান শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত দুই থেকে তিন দিন মোহাম্মদ নাসিমের ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক ছিল। তবে, বৃহস্পতিবার উঠানামা করছে। তার রক্তের একটা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, রক্ত জমাট বাঁধতে অসুবিধা হচ্ছে। এখনও তিনি নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে’। ডা. রাজিউল হক বলেন, তার শারীরিক অবস্থার আরও কিছুটা অবনতি হয়েছে। গত দুই দিন তার ব্লাড পেশার স্বাভাবিক থাকলেও বৃহস্পতিবার তা উঠানামা করেছে। তিনি আগের মতোই অচেতন অবস্থায় আছেন এবং তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেশন সাপোর্টেই রেখা হয়েছে। চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়য়ের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এমতাবস্থায় রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ নাসিমকে লাইফ সাপোর্টে রেখেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি তার। রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ১ জুন রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই দিনই তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ৪ জুন তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ৫ জুন ভোরে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সমস্যার কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়। গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার নমুনা নিয়ে পররীক্ষা করা হলে মোহাম্মদ নাসিমের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তৃতীয় পরীক্ষায়ও তার করোনা নেগেটিভ ধরা পড়ে। এতে ডাক্তাররা আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন।কিন্তু আচমকা অবস্থার অবনতি হওয়ায় ডাক্তাররা বিদেশ নিতে নিরুতসাহিত করছেন।গত ৮ দিন ধরে তিনি লাইফ সাপোর্টে।তার চেতনা নেই। মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রও তিনি। বর্তমান সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর