বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেনে নিন সূরা ফাতিহায় যে অঙ্গীকারের কথা!

সূরাতুল ফাতেহা। যা দিয়ে কুরআন শুরু। ফাতেহা বলা হয় চাবিকে। যা দিয়ে কোনো কিছু খুলে। ফাতেহা দিয়ে কুরআন খুলতে হয়। তাই কুরআনে প্রবেশ করার জন্য সূরাতুল ফাতিহার গভীর মর্মবাণী ভালো করে জেনে নেয়া দরকার।

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ-লামিন। কৃতজ্ঞতা জানাই সেই আল্লাহর, যিনি এই সৃষ্টি জগতের মালিক ও প্রতিপালক। আর রাহমানির রাহীম। তিনি পরম করুণাময়, অত্যন্ত দয়ালু ও দাতা। মালিকি ইয়াও মিদ্দিন। তিনি মালিক বিনিময় দিবসের। তিনি একচ্ছত্র অধিপতি, একচ্ছত্র মালিক, একেবারে মালিক বলা হয়েছে। সেই দিন কারো কোনো কথা, কারো কোনো আধিপত্য নেই। সেই দিন শুধু আল্লাহর। তিনি আরশে আসীন। সমগ্র সৃষ্টি তাঁর সম্মুখে আসামির মতো দাঁড়িয়ে থাকবে। সেই সত্তার কাছে আমরা বলি ইয়্যা কা নায়া বুদু ওয়া ইয়্যা কানাছ তায়িন। আমরা কেবল তোমারি গোলামি করি এবং আমাদের যা কিছু প্রয়োজন, যা কিছু চাওয়ার তা শুধু তোমার কাছেই চাই।

সূরা ফাতিহা আমরা সবসময় নামাজে তিলাওয়াত করি। কিন্তু এর সত্যতা কোথায় আমাদের জীবনে? এই যে সূরার প্রথমে বলেছি, আলহামদুলিল্লাহ। কৃতজ্ঞতা সব আল্লাহর। প্রশংসা সব আল্লাহর। কিন্তু আসলেই কি আমি কৃতজ্ঞ আল্লাহর কাছে? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে দেখি। আমি কি সত্যিই কৃতজ্ঞ আল্লাহর কাছে। সূরা হিজরের ৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে আমরা তোমাকে দিয়েছি, বার বার আবৃত্তি করার মতো সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন।

প্রতি নামাজেই তো এই সূরা আবৃত্তি করছি। কথাগুলোতো আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করি। যদি কথাগুলো বুঝে বুঝে বলতাম, বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করতে পারতাম যে, আসলেই আমি কী বলছি আল্লাহর কাছে? আমি কি তা জানি এবং অনুধাবন করি?

সূরা নিসায় আছে হাত্তা তাহ্লামু মা তাকুলুন… নামাজ সেই সময় পড়া উচিত, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা জানো তোমরা কী বলছো? অথবা যে পর্যন্ত না তোমরা বুঝতে পারছো কী বলছো?
সালাত এমন একটা বিষয়, যা দিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু বলা হয়। এখন আমি নিজেই তো বুঝি না যে আল্লাহকে আমি কী বলছি? তো সেই নিবেদন তিনি নিবেন কেন? রাসূল সা: বলেছেন, অনেক নামাজ আছে কাঁধের উপরেও উঠে না। আবার কান দেখিয়ে বলেছেন, কানের উপরেও উঠে না।

তাহলে এই যে, সালাতে দাঁড়িয়ে বললাম, ইয়্যা কানায়া বুদু ওয়া ইয়্যা কানাছ তাইন, অর্থাৎ আমরা শুধু তোমারই গোলামি করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই। যা চাওয়ার তোমার কাছেই চাই। এটা আমাদের জীবনে আদৌ সত্য নয়। নামাজে দাঁড়িয়ে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলি আমরা।

আবার সূরা ইউনূসের ৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেনÑ নিশ্চই যারা আমার সাক্ষাৎ আশা করে না এবং যারা এ পৃথিবীর জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট এবং এ নিয়েই পরিতৃপ্ত এবং যারা আমাদের নিদর্শনগুলো সম্পর্কে গাফেল, এরা হলো তারা যাদের আশ্রয় হবে আগুন। ওই কারণে যা তারা উপার্জন করত।
ইহ্ দিনাছ-ছিরাতোয়াল মুছ্তাকিম। আমাদেরকে চালাও তোমার সোজা পথে। আমরা তো নামাজে দাঁড়িয়ে বলছি যে আমাদেরকে চালাও বা দেখিয়ে দাও সোজা পথ। এখন আমরা প্রত্যেকেই যার যার অন্তরের কাছে জিজ্ঞেস করি, আসলেই কি আমি আল্লাহর পথে চলতে চাই? আসলেই কি আল্লাহর কাছে যেতে চাই। আসলেই কি আমি চাই যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর একজন সম্মানিত বান্দা হই। কিয়ামতের দিন আমি তার মনোনীত বান্দাদের মধ্যে গণ্য হই। এ ধরনের স্বপ্ন কি আমি আদৌ দেখি। অথচ নামাজে দাঁড়িয়ে মুখস্থ পড়া পড়ে যাচ্ছি।

আমাদের সামনে কিয়ামত নামে একটি দিন আছে। যেদিন সর্বকালের সব মানুষের বিচার হবে। সে দিন প্রতিটি মুহূর্ত আমরা আমাদের এখনকার জীবনে কী করেছি, প্রতিটি চোখের পলক কিভাবে ফেলেছি সব কিছু দৃশ্যমান হবে। সব কিছু দেখা যাবে। সূরা জিলজালের ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন ‘তারপর যে অতি অল্প পরিমাণে ভালো কাজ করবে সে তা দেখে নেবে এবং যে অতি অল্প পরিমাণে খারাপ কাজ করবে সে তা-ও দেখে নেবে’।
ছিরা তোয়াল্লাজিনা আন্ আমতা আলাইহিমÑ তাদের পথে চালাও যাদের ওপর তোমার ওহির করুণা হয়েছে।

গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওলাদ্ দোয়াললিনÑ সেই অভিশপ্তটা তাদের ওপর চড়াও হতে পারেনি, ফলে না তারা ভ্রষ্ট হয়েছে। তাহলে অভিশপ্তটা যদি কোনো মানুষের ওপর চড়াও না হয় তবে পথভ্রষ্ট হওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

এটাই যদি বাস্তবতা হয়ে থাকে তাহলে পুণ্য কী? আর আমরা পুণ্য মাপ্বই বা কী দিয়ে? তাহলে আসলেই কি আমরা পুণ্য করছি? সমাজে যেসব পুণ্যের ধারাবাহিকতা চালু আছে তার মধ্যে রয়েছে কুরআন পড়লেই অক্ষরে অক্ষরে ১০ নেকি। তার ওপর আবার নফল ইবাদত, আবার মৃত মানুষের নামে বখ্সে দেয়া, কুরআন খতম ইত্যাদি।

অথচ সূরা জুখরুখে ৩৬-৩৮ আয়াতে আল্লাহ বলেছেনÑ যারা কুরআন থেকে অস্পষ্ট থাকে, আমরা তাদের ওপর শয়তান চাপিয়ে দেই। সে তার বন্ধু হয়ে যায়। এ শয়তানরা এসব লোককে সঠিক পথে আসতে বাধা দেয়। কিন্তু এরা মনে করে আমরা ঠিক পথেই চলছি। এরপর যখন এ ব্যক্তিকে আমার সামনে হাজির করা হবে তখন সে তার সঙ্গী শয়তানকে লক্ষ্য করে বলবে হায় আফসোস, তোমার ও আমার মাঝে যদি দ্ইু দিগন্তের ব্যবধান থাকত। তুমি কত নিকৃষ্ট সঙ্গীই না ছিলে।

এই যদি আল্লাহর নিয়ম হয়ে থাকে তাহলে আমরা যারা কুরআন জানি না, কুরআন যাদের কাছে অস্পষ্ট, আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী তাদের পরিণতি কি সূরা জুুখরুকের ৩৬ -৩৮ আয়াতের মধ্যে পড়ে গেলাম না? আমাদের কাছে কুরআন শুধু অস্পষ্টই নয়, কুরআনের ‘ক-ই’ আমরা জানি না। আমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জানতেই পারলাম না যে আল্লাহ আমাদের কাছে কী বার্তা পাঠিয়েছেন? অথচ দুনিয়ার সব কিছুই আমাদের চলছে এবং হচ্ছে কিন্তু আল্লাহ আমাদের কাছে কী বার্তা পাঠিয়েছেন তা নিজের ভাষায় একবার পড়েও দেখলাম না।

এখন আমরা যারা এই কুরআনের পাঠক তারা কি ভেবে দেখেছি যে, আমাদেরকে কি আল্লাহ চালাচ্ছেন নাকি অন্য কেউ চালাচ্ছে? কুরআনেই তো আমরা দেখি যে, মানুষকে চালায় দুটি শক্তি। একটি আল্লাহ অন্যটি শয়তান, আমরা যদি প্রতিটি মুহূর্ত ভাবি যে এই সময়টা আমি কার হুকুম মানছি, আল্লাহর না শয়তানের, তাহলে উত্তর পেয়ে যাবো।

যদি কেউ জীবনে এই লক্ষ্য স্থির করে যে, আমার সৃষ্টিকর্তা আমার ওপর অসন্তুষ্ট থাকবেন না তাহলে সে কুরআন অনুযায়ী চলবে। সে ছিরাতাল মুস্তাকিমের পথ গ্রহণ করবে। তাহলে সেই মানুষের জীবনে বাহ্যিক দিক হোক, আচরণগত দিক হোক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দিক, যেকোনো দিকই হোক না কেন তার আত্ম প্রকাশের যতগুলো অভিব্যক্তি আছে তার কোনোটার মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি থাকবে না।

এই বিভাগের আরো খবর