শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিডিপি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে

ডেস্ক নিউজ : চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো যে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সবচেয়ে কম। শুধু তাই নয়, আগামী অর্থবছরে (২০২০-২১) তা কমে এক শতাংশে নেমে যেতে পারে। গত সোমবার রাতে বিশ্বব্যাংক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনোমিক প্রসপেক্টস ২০২০’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে অর্থনৈতিক সংকট সহসাই মিটছে না। বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে করোনার ক্ষত অন্তত আগামী বছরেও থাকবে। এ জন্য উদীয়মান দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া জরুরি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সারা বিশ্বের অর্থনীতি সবচেয়ে বড় মন্দায় পড়ছে।

গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, এ বছর ২ থেকে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। করোনা সংকটের দুই মাস পেরুনোর পর বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির সেই পূর্বাভাস আরও কমিয়ে দিল। করোনার কারণে বাংলাদেশ কি ধরনের সমস্যায় পড়েছে- সে সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে বলেছে, করোনার কারণে দেশের শিল্প পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যা রফতানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া করোনায় প্রবাস আয়েও পতন হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। যা শুধু দেশের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়; শিল্পখাতের জন্য আনা মধ্যবর্তী পণ্য আনা-নেওয়াকেও ব্যাহত করেছে।

চলতি অর্থবছরে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। প্রতি বছর বাজেটের আগে একটি সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এবার তা করা হয়নি। তবে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা করোনার কারণে প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

ইকোনোমিস্টস ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের হিসাব, এবার ১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আর দেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, এবার প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশে নেমে আসতে পারে।

করোনায় সব কিছু বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক বলেছেন, লকডাউনের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের মতো দেশে ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগ ব্যাপকভাবে কমেছে।

এসব দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলো হলো বেসরকারি খাতের প্রাণ। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ব্যাপক পরিমাণ কর্মসংস্খান ও বিনিয়োগ হারিয়েছে। পল্লী এলাকায় খাবার ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহও বিঘ্নিত হয়েছে।সম্প্রতি লকডাউন শিথিল করায় এসব দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।

করোনার কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বেশ কিছু শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা পরি¯ি’তি প্রকট হলে দারিদ্র্য বাড়বে। এই অঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক খাতে বিপুলসংখ্যক লোক কাজ করেন। করোনা মহামারি তাঁদের স্বাগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এসব দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ভারসাম্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

ভবিষ্যত সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, কোভিড ১৯ মহামারি বিশ্বের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় লকডাউন ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে থামিয়ে দিয়েছে। ফলে বড় অর্থনীতির দেশের পাশাপাশি উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর গভীর মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। করোনা সংকট প্রলম্বিত হলে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে ঝুঁকি তৈরি হবে।যেমন, এসব দেশের স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল। কিন্তু বহির্বানিজ্যের সঙ্গে এসব দেশের অর্থনীতি গভীরভাবে সম্পৃক্ত।

এসব দেশের বিনিয়োগ শ্লথ হতে পারে; বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার হতে পারে। তাই করোনার প্রভাব মোকাবিলায় করে দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যেমন, স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার পাশাপাশি অর্থনীতি চাঙা রাখতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে চারটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যাবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হতে পারে (মাইনাস ৩ দশমিক ২ শতাংশ)। অবশ্য ভারতের ২০১৯-২০ অর্থবছর গত মার্চ মাসে শেষ হয়ে গেছে। এপ্রিল মাস থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, নেপালে ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ভুটানে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এরমধ্যে মালদ্বীপে মাইনাস ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। এ ছাড়া আফগানিস্তানে মাইনাস সাড়ে ৫ শতাংশ, শ্রীলংকায় মাইনাস সাড়ে ছয় শতাংশ ও পাকিস্তান মাইসাস ২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বিশ্বব্যাংক আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার হিসাব পঞ্জিকাবর্ষ ধরে করেছে। সার্বিকভাবে ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোর জিডিপি সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক বা মাইনাস ৬ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। এ ছাড়া ইউরোপীয় অঞ্চলে মাইনাস ৯ দশমিক ১ শতাংশ, রাশিয়ায় মাইনাস ৬ শতাংশ, ব্রাজিলে মাইনাস ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে কোভিড ১৯ এর সুতিকাগার চীনে এ বছর ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সার্বিকভাবে ২০২০ সারাবিশ্বে গড়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

এই বিভাগের আরো খবর