মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরুর রক্ত দিয়ে তৈরি হলো করোনার ঔষধ শীঘ্রই পরীক্ষামূলক ব্যবহার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি পাওয়া যাবে গরুর শরীর থেকে। আর তা দিয়েই চিকিৎসা করা হবে করোনা রোগীদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা অঞ্চলের একটি বায়োটেক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা এমনই একধরনের গরুর জেনেটিক নকশা করছেন। আগামী গ্রীষ্মেই এই ওষুধের ট্রায়াল শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিনের এক প্রবন্ধে এমন তথ্যই জানা গেল। করোনার রোগের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কার্যকর ওষুধ হলো রিমডেসিভির ও ডেক্সামেথেসোন। তারপর আবার ভালো কাজ করছে প্লাজমা থেরাপি। কিন্তু এবারের আবিষ্কারটি খুব ভালো ফল দেবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সংক্রামক রোগের চিকিৎসক আমেশ আদালজা বলেন, এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ফল। কভিড-১৯ প্রতিরোধে যত বেশি ব্যবস্থা উদ্ভাবন হয় ততো ভালো।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন রোগের অ্যান্টিবডি পেতে এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জিনগতভাবে নকশা করা কোষ বা তামাক পাতা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ২০ বছর আগেই দুধ উৎপন্নকারী প্রাণীর শরীর থেকে অ্যান্টিবডি তৈরির পরীক্ষা শুরু করে সাউথ ডাকোটার এসএবি বায়োথেরাপিউটিকস। এজন্য তারা জিনগতভাবে নকশা করা এ সব গাভীর শরীরে ভাইরাসটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করায়। এই গাভীগুলোর কোষে এমন ডিএনএ থাকে যা ভাইরাসগুলোর সংস্পর্শে এসে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। পরে এই অ্যান্টিবডি মানুষের শরীরে প্রবেশ করালে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। এসএবি বায়োথেরাপিউটিকস এই ওষুধটির কয়েকশ ডোজ তৈরি করেছে। এই ওষুধটির নাম হলো এসএবি-১৮৫। আগামী গ্রীষ্মেই এই ওষুধের ট্রায়াল শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কতোজনের শরীরে এই ওষুধটি  প্রয়োগ করা হবে তা নিয়ে এখনো কোনো ধরনের তথ্য জানানো হয়নি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

এসএবি বায়োথেরাপিউটিকসের সিইও এডি সুলিভান বলেন, পরীক্ষাগারে এই প্রাণীগুলো (গাভী) এক ধরনের নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। যা করোনাভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে। আমরা এই ওষুধটি নিয়ে ট্রায়ালে যেতে চাই। করোনা রোগের সামাধানের আশায় সম্ভাব্য এই ওষুধটি নিয়ে কাজ করছি আমরা। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এডি সুলিভান জানান, সাধারণত অন্যকোন প্রাণীর চাইতে আকারে বড় হওয়ার কারণে গরুর শরীরে প্রচুর রক্ত উৎপন্ন হয়। জিনপ্রকৌশলের মাধ্যমে উৎপাদিত এইসমস্ত গরুর রক্ত মানুষের শরীরের অনুরূপ প্রোটিন সমন্বয় করতে পারে অনেক দ্রুত। আর শুধু তাই নয়, এই গরুর রক্তে প্রতি মিলিলিটারে মানুষের রক্তের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

গরুর রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি তৈরির আরেকটি সুবিধা রয়েছে, পৃথিবী জুড়ে অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান অ্যান্টিবডি তৈরি করছে তাদের মূল পরিকল্পনা হলো একই ধরনের বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন করা। এই অ্যান্টিবডিগুলো মূলত ভাইরাসের যেকোন একটি অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন, কভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে শুধু ভাইরাসের উপরিতলের স্পাইকগুলোকে চিহ্নিত করতে পারে এই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। কিন্তু জিনপ্রকৌশলের মাধ্যমে উৎপাদিত এসব গরুর রক্ত থেকে একাধিক প্রকৃতির অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অর্থাৎ পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি, যা ভাইরাসের একাধিক অংশকে চিহ্নিত করতে পারে। আর মানুষও এভাবেই বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বলে জানান সুলিভান। গরুর রক্তের প্রোটিন মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আর এক্ষেত্রে ভাইরাসটি যদি জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে নিজের আকার বা প্রকৃতি পালটে ফেলে তাহলেও পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি ঠিকই এর কোন না কোন অংশকে চিহ্নিত করে ফেলবে এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করে যাবে তখনো।

এই বিভাগের আরো খবর